গোলাপ ঝোঁপঝাড় জাতীয় শোভাবর্ধক ফুল গাছ এবং বাগানের জন্য অতি জনপ্রিয় এক ফুল৷ গোলাপকে ফুলের রাণী বলা হয়৷ আসলে গোলাপ ছাড়া ফুলের বাগান অপূর্ণ থাকে৷ যে কেউ গোলাপের বাগান করতে পারে৷ বর্তমানে বিশ্বে ২০০০ জাতের গোলাপ আছে৷
গোলাপের জাতসমূহ:
===============
বাস্তবে যেখানে গোলাপ চাষ করা হয় সেখান হতে সচক্ষে দেখে জাত নির্বাচন করা উচিত৷ এতে মনের মত করে জাত নির্বাচন সম্ভব হবে৷ তবে টি, হাইব্রিড টি, হাইব্রিড পার্পেচুয়াল প্রকারের বিভিন্ন জাত নির্বাচন উত্তম৷ নিচে কয়েকটি উন্নত জাতের গোলাপের বর্ণনা দেয়া হল:
* হাইব্রিড টি
* ফ্লোরিবান্দা গোলাপ
* ফ্লোরিবান্দা ডোয়ার্ফ
* পলিয়েন্থাস গোলাপ
* হাইব্রিড পার্পেচুয়াল
হাইব্রিড টি : টি এবং হাইব্রিড পার্পেচুয়াল শ্রেণীর মধ্যে এবং নিজেদের মধ্যে শংকরায়নের ফলে সৃষ্টি এই প্রকারের গোলাপ সবচাইতে জনপ্রিয় এবং বাগানে খুব সহজেই জন্মানো যায়৷ ২-৬ ফুট উচু হয়৷ গাছে শুধু মাত্র একটি অথবা ২টি অথবা ৩টি ফুল ফুটতে পারে৷ ফুলের ও বিভিন্ন রং হয়ে থাকে৷ বৃন্তের গোড়া হতে ভোর বেলা এই সকল ফুল ফুটে৷ ঠাণ্ডা এবং শুষ্ক আবহাওয়া গাছ বৃদ্ধির জন্য উপযোগী৷
ফ্লোরিবান্দা গোলাপ : এই প্রকারে গোলাপ সমূহ ডোয়ার্ফ পলিয়েন আস এবং হাইব্রিড টি এর শংকরায়ণের ফলে সৃষ্টি৷ ফুল গুচ্ছের জন্য ফ্লোরিবান্দার জাতসমূহ খুবই জনপ্রিয়৷ ছাটাইয়ের উপর নির্ভর করে এই গাছের উচ্চতা ২-৬ ফুট হয়ে থাকে৷ এই প্রকারের গাছে মোটামোটি সতেজ সবল ফুল দেয় এবং ফুল ঘরে ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখার জন্য প্রসিদ্ধ৷
ফ্লোরিবান্দা ডোয়ার্ফ : গাছ খাট এবং গুচ্ছে ফুল দেয়৷ গাছ ৬ ইঞ্চি হইতে ২০ ইঞ্চি পর্যন্ত উঁচু হয়৷
পলিয়েন্থাস গোলাপ : ফুল ফ্লোরিবান্দার চেয়ে ছোট কিন্তু বড় আকৃতির গুচ্ছে ফুটে৷ বাগানের সীমানায় অন্যান্য বহুবর্ষজীবী ফুল গাছের সঙ্গে এই জাতীয় গোলাপ গাছ লাগানো হয়ে থাকে৷ জাপানে রোজা চাইনেনসিস এবং রোজা মাল্টিফ্লোয়ার শংকরায়ণে এই শ্রেণীর ফুলের সৃষ্টি৷
হাইব্রিড পার্পেচুয়াল : ইউরোপীয় বুর্বোন ও এশিয়া হাইব্রিড চায়নার মধ্যে শংকরায়ণের পর গোলাপ জাতি গ্যালিকার সমন্বয়ে সৃষ্টি৷ অধিক বৃষ্টিময় ও সিক্ত জলবায়ুতেও জণ্মে৷ ফুল খুব বড় এবং সকল সময়েই ফুটে৷ গাছ খুব ঝোপালো এবং শক্ত গড়নের৷
চাষাবাদ পদ্ধতি
=====================
স্থান নির্বাচন :
গোলাপ আলোকোজ্বল জায়গা পছন্দ করে৷ অনেক গোলাপ আছে যারা কমপক্ষে দিনের অর্ধেক সময় সূর্যের আলো না পেলে স্বাভাবিকভাবে বাড়তে চায় না৷ মাটি অবশ্যই সুনিষ্কাশিত হতে হবে৷
মাটির ধরন :
গোলাপ সবরকম মাটিতেই জন্মাতে পারে, তবে দোআঁশ মাটি গোলাপ চাষের জন্য উত্তম৷ গোলাপ কিছু অম্ল হইতে সামান্য ক্ষার মাটিতে ভাল হয়৷
রোপণ কাল:
আর্শ্বিন-কার্তিক মাসে অথবা আষাঢ় শ্রাবণ মাসে চোখ কলম মাঠে লাগানোর জন্য উত্তম সময়৷ তবে গোলাপ সারা বছরই জন্মানো যায়৷
জমি তৈরি , বেড তৈরি , গর্ত খনন: যেহেতু কার্তিক মাসে মূল বাগানের জমিতে চারা রোপণ করিতে হবে তাই প্রথম ২/৩ সপ্তাহ পূর্ব হতেই জমি তৈরির কাজ শুরু করতে হবে৷ চারা রোপণের পূর্বে জমিতে গভীর ভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা ও সমান করিতে হবে৷ মাটি বেশী অম্লীয় হলে চুন এবং বেশি ক্ষারীয় হলে অ্যামোনিয়াম সালফেট কব্যবহার করা দরকার৷ তাছাড়া মাটি এঁটেল হলে প্রতি ১ বিঘা জায়গার জন্য ১২৫ সের চুন প্রয়োগ করতে হবে৷ এই চুন চারা রোপণের এবং জমি তৈরির এক দেড় মাস পূর্বে প্রয়োগ করা দরকার৷ আকাংখিত বাগানের ডিজাইন অনুযায়ী জমিতে ছোট ছোট খণ্ডে ভাগ করো নিয়ে চলাফেরার রাস্তা পানি সেচ ও নিকাশের জন্য ড্রেনের ব্যবস্থা করতে হবে৷ বেড সমূহ ৪-৬ ইঞ্চি উঁচু হওয়া বাঞ্ছনীয়৷ বেড তৈরির পর নির্দিষ্ট দূরত্বে গর্ত খনন করে মাটি সার দ্বারা পূর্ণ করতে হবে৷
* ডোয়ার্ফ পলিয়েন্থার জন্য দেড় ফুট ,
* ফ্লোরিবান্দা ও চায়না এর জন্য ২ ফুট,
* হাইব্রিড টি এর জন্য ৩ ফুট,
* হাইব্রিড পারপেচুয়াল এর জন্য ৩ ফুট,
* দামাস্ক গোলাপ এর জন্য ৪ ফুট,
* টি এর জন্য ৪.৫ ফুট,
* নয়সেট এর জন্য ৬ ফুট এবং
* লতানো গোলাপের জন্য ৮ ফুট
* দূরত্বে গর্ত তৈরীর ব্যবস্থা নিতে হবে৷ গর্তটির আকার হবে ২¢−২¢−২¢
চারা রোপণ:
===============
পলিথিনের প্যাকেট হলে ব্লেড দ্বারা প্যাকেট কেটে নিতে হবে৷ টব ও পলি প্যাকেটের চারা গর্তের মাটি সরিয়ে এমনভাবে গর্তের মধ্যে রাখতে হবে যাতে গাছের গোড়া ১ ইঞ্চি নিচে ডুবে যায়৷ অবশেষে সামান্য পঁচা গোবর ও কিছু দোঁআশ মাটি ভালোভাবে শিকড়ের চারিপার্শ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে৷ পরে গর্তের মাটি গাছের গোড়ায় দিয়ে শক্ত করে চেপে দিতে হবে৷ চারা রোপণের সঙ্গে সঙ্গে কিছু পানি দিয়ে গোড়া ভিজিয়ে দিতে হবে৷ তাছাড়া লাগানোর পূর্বে গাছের গোড়া পানিতে ভিজিয়ে রোপণ করা যায়৷
সার ব্যবস্থাপনা:
=============
গর্তের নিচের অর্ধেক মাটির সাথে ৭ কেজি পচা গোবর সার, ০.৫০ কেজি ছাই, ০.২৫ কেজি হাড়ের গুঁড়া অথবা ২ ছটাক টিএসপি উত্তমরূপে মিশাতে হবে৷ উপরের অর্ধেক মাটির সাথে কম্পোষ্ট, পাতা পঁচা সার ইত্যাদি মেশানো দরকার৷ তাছাড়া খৈল, পোড়ামাটি, মাছের গুঁড়া ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়৷ এই গুলি গাছ লাগানোর ২০ দিন পূর্বে মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশাতে হবে৷
উপরি সার প্রয়োগ : গোলাপের কুড়ি দেখা দিলে ১৫ দিন অন্তর অন্তর গাছপ্রতি অর্ধমুষ্টি সারের মিশ্রণ প্রয়োগ করলে উৎকৃষ্ট ফুল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ ঐ অর্ধমুষ্টি সারের মিশ্রণটিতে ২ ভাগ টি এসপি. ১ ভাগ ইউরিয়া ও 1/2 ভাগ পটাশ সার ব্যবহার করা যেতে পারে৷
রোগ বালাই দমন:
====================
* ডাইব্যাক বা আগা শুকানো রোগ
* পাতায় কালো দাগ পড়া
* পাইডারী মিলডিউ
* রাস্ট বা মরচে ধরা রোগ
* ডাইব্যাক বা আগা শুকানো রোগ
ডাইব্যাক বা আগা শুকানো রোগঃ
রোগের লক্ষণ :
এই রোগে গাছের আগা শুকিয়ে নিচের দিকে নামতে থাকে৷ অতি আক্রমণে গাছ মারা যায়৷
প্রতিকার :
গাছ ছাটাইয়ের সময় গাছ যাতে থেঁতলাইয়া না যায় সে দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে৷
সার দেয়ার সময় খেলায় রাখতে হইবে যেন শিকড়ের কোন ক্ষতি না করে৷
ডায়াথেন এম ৪৫ ঔষধের ২৫ গ্রাম ১২.৫ সের পানির সংগে মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে৷
পাইডারী মিলডিউঃ
লক্ষণ :
এই রোগে পাতার উপর ফোস্কা পড়ে৷ পাতা কুঁকড়ে যায়৷ পাতায় সাদা তুলার মত দেখা যায়৷ কুঁড়ি ফুটতে পারে না, নষ্ট হয়ে যায়৷
দমন :
* রোগাক্রান্ত ডগা পাতা পুড়িয়ো ফেলতে হবে
* থিওভিট ৮০ ডব্লিউ পি ১ ছটাক ১২.৫ সের পানিতে মিশিয়ো স্প্রে করতে হবে৷
পাতায় কালো দাগ পড়াঃ
লক্ষণ :
পাতার উভয় পৃষ্ঠায় ছোট ছোট বাদামী কালো দাগ পড়ে৷ দাগসমূহ ক্রমশ গোলাকৃতি দাগে পরিণত হয়৷ অবশেষে পাতা ঝরে গাছ শ্রীহীন হয়ে পড়ে৷
প্রতিকার:
* দাগযুক্ত পাতা পুড়ে ফেলতে হবে৷
* ১০ লিটার পানির সংগে ১০ গ্রাম বেভিষ্টিন মিশিয়ো স্প্রে করা যায়৷
* ২৫ গ্রাম ডায়াথেন এম ৪৫ ঔষধ ১২.৫ সের পানিতে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর ২/৩ বার স্প্রে করিতে হবে৷
রাস্ট বা মরচে ধরা রোগঃ
লক্ষণ :
পাতার নিচে প্রথমে লালচে রংয়ের ফোস্কার মত দাগ পড়ে৷ পরে বাদামী রং ধারণ করে৷
দমন :
২৫ গ্রাম ডায়াথেন এম ৪৫ ঔষধ ১২.৫ সের পানিতে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর ২/৩ বার স্ প্রে করিতে হবে৷
অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা
=================
সেড প্রদান :
চারা টিকে না যাওয়া পর্যন্ত গাছে ছায়া প্রদানের ব্যবস্থা নিতে হবে৷
আগাছা দমন :
গাছের গোড়ায় যে সমস্ত আগাছা উঠিবে তা নিড়িয়ে দিতে হবে৷
মালচিং :
গ্রীষ্মকালে গাছের গোড়া খড়কুটা বা কম্পোষ্ট দ্বারা ঢেকে দিলে গাছে গোড়ার পানি সংরক্ষিত থাকবে এবং আগাছা দমন হবে৷
সেচ প্রদান :
রোপণের পর ঘন ঘন এবং পরে সপ্তাহে অন্তত একবার ভালভাবে পানি সেচ দিতে হবে৷ পানি সেচ দেওয়ার পর আস্তও ভেঙে দেয়া উচিত৷
মাটি বদলানো :
৩/৪ বত্সর পর মাটি গোলাপ চাষের জন্য অনুপযোগী হইয়া পড়ে৷ বাগানের পুরাতন মাটি সরাইয়া নতুন ভাল দোআঁশ মাটি ও সার প্রয়োগ করতে হবে৷
ফেকরি অপসারণ :
গোলাপ গাছের কলমের আদিজোড় (স্টক) হইতে প্রথম বছর ফেকরি বা চারা বের হয় যা গাছকে দুর্বল করে ফেলে৷ গাছের গোড়া হতে এই সকল ফেকরি ছিড়ে দিতে হবে৷
অপ্রয়োজনীয পার্শ্ব চারা অপসারণ :
গাছের যে কোন কচি পার্শ্ব বৃদ্ধি যদি গাছের কেন্দ্রে ভিড় জমায় তাহলে হাতের আঙুলের নখ দ্বারা ছিঁড়ে ফেলতে হবে৷
উইন্টারিং বা শীত লাগানো :
গোলাপ গাছের নির্দিষ্ট একটি সুপ্তকাল আছে৷ এই উদ্দেশ্যে অক্টোবর নভেম্বরে গাছ ছাটাইয়ের প্রায় ১৫ দিন পূর্বে গাছের গোড়ার চারিদিকে ৬ ফুট পরিমাণ মাটি তুলে মূলসমূহকে খোলা অবস্থায় রাখা হয়৷ অতঃপর ১৫ দিন অতিবাহিত হলে গাছ ছাটাই কাজ সম্পন্ন করা হয়৷ গাছ ছাটাইয়ের ১৫ দিন পর গাছ প্রতি ২-৩ সের পচা গোবর, ৪ তোলা টিএসপি, ৪ তোলা পটাশ সার মাটির সংগে মিশাইয়া গর্ত ভরাট করতে হয়৷ এরপর ভালভাবে পানি সেচ দেয়া হয় এবং খৈল ১৫ গুণ পানিতে গুলে ৮/১০ দিন পচিয়ে প্রতি সপ্তাহে একবার করে সিঞ্চন করতে হয়৷ এতে গাছ উত্তম ফুল দেয়৷
গাছ ছাটাই :
==================
* গোলাপ গাছে নিয়মিত ছাটাইয়ের দরকার হয়৷ অন্যথায়, গাছ অল্প সময়ে খুব ঝোঁপালো এবং প্রশ্বস্ত হয়ে যায়৷ ফলে গাছে ফুল উত্পাদন কমে যায়৷ কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাস গোলাপ গাছ ছাটাইয়ের উত্তম সময়৷ কার্তিক মাসের পূর্বে গাছ ছাটাই করলে গাছে পত্র পল্লব বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে৷
* প্রতিটি গোলাপ গাছেই কিছু সংখ্যক কুড়ি থাকে যাহা অনেক সময় চোখে দেখা যায় না৷ কাণ্ডের জায়গায় জায়গায় এই সমস্ত কুড়ি অবস্থিত৷ সুপ্ত কুড়ির কিছুটা উপরে ডালপালা ছাটাই করতে হবে৷ বেশি উপরের কিংবা কুড়ি সংলগ্ন জায়গায় ছাটাই করা ঠিক হবে না৷ বেশী উপরে করলে অতিরিক্ত অংশের ডালা শুকিয়ে মরবে এবং কাছাকাছি করলে ঘুমন্ত কুড়ি নষ্ট হতে পারে৷
* নতুন লাগানো গাছের ছাটাই : মরা ডাল, এলোপাথাড়িভাবে পড়ে থাকা ডাল (ক্রসিং ব্রাঞ্চেজ) এবং ব্লাইণ্ড সুটসমূহ ছাটাই করতে হবে৷ ৪টিসুন্দরভাবে প্রসারিত ডালের ৩ হইতে ৪টি কুড়ি রেখে অন্যান্য ডালা ও অতিরিক্ত অংশসমূহ কেটে ফেলতে হবে৷ যে গাছের একটি মাত্র কাণ্ড দেখা যায় তার ৩/৪ টি চোখ রেখে কেটে ফেলতে হবে৷ এতে অনেক শাখা প্রশাখা বের হবে৷ লতানো গোলাপের বেলায় ২/৩ টি প্রধান শাখা রেখে অন্যগুলি গোড়ায় কেটে দিতে হবে৷
* প্রতিষ্ঠিত গাছের ছাটাই :প্রতিষ্ঠিত গাছের বেলায় জাতের উপর নির্ভর করে ছাটাই কার্য সম্পাদন করতে হয়৷
* মরা শাখা, ব্লাইন্ড শাখা সমূহ অপসারিত করতে হবে৷ ঘন এবং এলোপাথাড়িভাবে অবস্থিত শাখা প্রশাখাসমূহ অপসারণ করতে হবে৷ শুধুমাত্র ৪-৫টি শাখা থাকবে৷ টি, হাইব্রিড টি হাইব্রিড পার্পেচুয়াল, চায়না রোজ এবং ডোয়ার্ফ পলিয়েন্থাস জাতীয় গোলাপ গাছের জন্য এটা প্রথম করতে হবে৷
* টি গোলাপের বেলায় প্রধান কাণ্ডটির তিন এর এক অংশ কেটে ফেলতে হবে৷ পার্শ্বশাখা সমূহের ২-৩টি চোখ রোখে অবশিষ্ট অংশ কাটতে হবে৷
* হাইব্রিড পার্পেচুয়াল তাদের প্রধান কাণ্ডের দৈর্ঘ্যের অর্ধেক অংশ কাটতে হবে পার্শ্ব শাখাসমূহ ৫/৬ টি চোখ রোখে অবশিষ্ট অংশ কাটতে হবে৷
* হাইব্রিড টি এর বৃদ্ধির উপর ছাটাই নির্ভর করে৷ বৃক্ষ বা স্ট্যান্ডার্ড জাতীয় গোলাপের ছাটাই নির্ভর করে এর উপরের অংশটি হাইব্রিডটি অথবা হাইব্রিড পার্পেচুয়াল কিনা৷
* চায়না এবং ডোয়ার্ফ পলিয়েন্থা গোলাপের গাছের আকৃতি দেয়া, মরা ডাল অপসারণ এবং ঘন শাখা প্রশাখা অপসারণ ছাড়া তেমন ছাটাই করতে হয় না৷
* ক্লাইম্বার জাতীয় গোলাপের মরা ডাল এবং প্রয়োজনীয় অঙ্গ ছাটাই করা হয৷
* রেমলার জাতীয় গোলাপের গঠন দেওয়ার জন্য অঙ্গ ছাটাই করা যায়৷
* মৃত কুড়ি অথবা ব্লাইণ্ড আই অপসারণ : অনেক সময় ছাটাই করার পর দেখা যায় যে, শীর্ষ কুড়ি গজায় না৷ ফলে এই কুড়িটি ব্লাইণ্ডরূপে থেকে যায়৷ এপ্রিলের শেষের দিকে গাছে লক্ষ্য করলে এইরূপ ব্লাইণ্ড আই দেখা যেতে পারে তখন এই ডালসমূহ পুণরায় কাটতে হবে৷ এটা করা না হলে মরা ডাল সৃষ্টি হবে এবং রোগের একটি আশ্রয়স্থলে পরিণত হবে৷
ডিসবাডং :
বড় ফুল পেতে চাইলে কেন্দ্রের ফুলটি রেখে পার্শ্ববর্তী ফুলগুলি ছিঁড়ে দিতে হবে৷ হাইব্রিডটি এবং হাইব্রিড পার্পেচুয়াল জাতেই ডিসবাডিং করা হয়৷
মরা ফুল কর্তন :
দলমণ্ডল বা পাপড়ি শুকাতে দেখা দিলে ফুলটি কেটে ফেলা উচিত৷ জুন (জ্যৈষ্ঠ ১৫) মাসে প্রথম ফুল ফোটার পর বৃদ্ধি অংশটি ৭-৮ ইঞ্চি পরিমাণ কেটে দিলে পরবর্তী সেপ্টেম্বরে (ভাদ্র ১৫ ম) মাসে দ্বিতীয়বারের মত ফুল ফুটবে৷
পোকামাকড় দমন:
================
* জাব পোকা
* রেড স্পাইডার মাইট
* স্কেল বা আঁশ পোকা
* থ্রিপস
* স্লাগওয়ার্ম
* রেড বাড বোরার
জাব পোকা :
ক্ষতির লক্ষণ:
এই পোকা পাতার নিচের অংশ, কচি বিটপ এবং ফুলের কুঁড়ি থেকে রস খায়৷ এতে পাতা বেঁকে যায় এবং অনেক সময় পত্র পল্লবের অকাল মৃত্যু ঘটে৷ পোকাগুলো মধুরস নামের এক ধরনের তরল পাতার উপর ছাড়ে, ফলে সেখানে সুটি মোল্ড নামক কালো কালো ছত্রাক জন্মায়৷
দমন ব্যবস্থা : (ক) নাইট্রোজেন জাতীয় সার (ইউরিয়া) কম দিতে হইবে৷
(খ) চা চামচের ৪ চামচ ম্যালডান ৫৭ ইসি ১২.৫ সের পানর সংগে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে৷
রেড স্পাইডার মাইট:
ক্ষতিসাধন :
এই পোকা পাতার নিচের অংশ খায়৷ এতে পাতার উপরের পৃষ্ঠায় রূপালী দাগ পড়ে৷ অতি আক্রমণে পাতা কুঁকড়ে যায়৷
দমন ব্যবস্থা :
কেলথেন নামক কীটনাশক ৪ চা চামচ ১৫.৫ সের পানির সংগে মিশিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে৷
স্কেল বা আঁশ পোকা :
ক্ষতির লক্ষণ :
এই পোকা গাছের রস চুষে খায়৷ বেশি আক্রমণ হলে ডাল শুকিয়ো মারা যায়৷
দমন ব্যবস্থা :
ম্যালাডান ৫৭ ইসি নামক কীটনাশক ৪ চা চামচ পরিমান ১২.৫ সের পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে৷
থ্রিপস :
ক্ষতির লক্ষণ :
এই পোকা ফুলগুচ্ছ আক্রমণ কের কচি পাতা ও ফুলের রস চুষে খায়৷ ফলে পাতায় ছোপ ছোপ দাগ পড়ে এবং ফুলের আকৃতি বিনষ্ট হয়৷
দমন ব্যবস্থা :
সুমিথিয়ন ৫০ ইস কীটনাশকের ৪ চা চামচ ঔষধ ১২.৫ সের পানির সংগে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে৷
স্লাগওয়ার্ম :
ক্ষতির লক্ষণ :
এই পোকা পাতার নিচের অংশ খায়৷ ফলে পাতা জালের মত সাদা হয়ে যায় এবং পাতা মচ মচে হয়ে ভেঙে পড়ে৷
দমন ব্যবস্থা :
ডাইমেক্রন ১০০ ইসি ঔষধের ২ চা চামচ ঔষধ ১২.৫ সের পানির সাথে মিশিয়ে ভালভাবে পাতা, গাছ ভিজিয়ে দিতে হবে৷
রেড বাড বোরার :
ক্ষতির লক্ষণ :
কুঁড়ি নষ্ট করে৷
দমন :
যে কোন কীটনাশক প্রয়োগ করলেই চলে
ফুল সংগ্রহ:
=============
ফুল সংগ্রহ করতে হলে দ্বিতীয় পাঁচ পাতা শাখা কাটতে হবে৷ যদি বেশী লম্বা ভাবে কাটা হয় তাহলে ফুলের পরিমাণ হ্রাস পাবে৷
উৎপাদনে আয় ব্যয়ের হিসাব:
পাঁচ পাখি বা ১৫০ শতাংশ জমিতে ফুল চাষের জন্য প্রয়োজনীয় স্থায়ী উপকরণের হিসাব ও মূল্য দেয়া হলো
স্থায়ী উপকরণ (গোলাপের জন্য)
উপকরণের বিবরণ কয়টি প্রয়োজন প্রতি এককের দাম মোট ব্যয় কত বছর টিকে অপচয়/বছর
কোদাল ৮টি ১৫০ ১২০০ ৬ ২০০
কেচি ৪টি ১৫০ ৬০০ ৩ ২০০
নিড়ানি কাঁচি ১২টি ৩০ ৩৬০ ৩ ১২০
স্প্রে মেশিন ২টি ২৫০ ৫০০ ৪ ১২৫
স্যালো পাম্প ১টি ৮০০০ ৮০০০ ১০ ৮০০
পাইপ ১০০ ফুট ৪০ ৮০০০ ৩ ১৩৩৪
ফুলের চারা ১৫০০ ৪ ৬০০০ ৪ ১৫০০
মোট উপকরণের মোট ব্যয় ২০৬৬০ অপচয়(১ বছর) ৪২৮৪
৫ পাখি বা ১৫০ শতাংশ জমিতে সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন (১ বছর)
কাঁচামালের বিবরণ পরিমাণ প্রতি একরের মূল্য মোট মূল্য
সার/টিএসপি ১০০ কেজি ১৪ ১৪০০
গোবর ৩ গাড়ি ২২০০ ৬৬০০
খৈল ৭৫০ কেজি ২০ ১৫০০০
ঔষধ (বিষ) কীটনাশক ১১.৫ লিঃ ২৫০ ২৮৭৫/-
৫ পাখি জমি বা ১৫০ শতাংশ জমিতে চাষ, সার প্রয়োগ, গাছ লাগানো, পরিচর্যা, ফুল তোলা ও বিক্রি পর্যন্ত আনুমানিক ১ বছরে শ্রম খরচ :
গোলাপের জন্য = ৬৪৬৪০/-
গোলাপ (১৫০ শতাংশ জমিতে
প্রতিদিন গড়ে ১৭৭৫টি ফুল উৎপন্ন
হয় যার গড় মূল্য ২ টাকা করে মোট
মূল্য ৩৫৫০ টাকা)
গোলাপ = ১০০০০০ করে ৫ মাস (পিক সিজন) = ৫০০০০০/- টাকা
৩০০০০ করে ৭ মাস (অফ সিজন) = ২১০০০০
১ বছরের আয় = ৭১০০০০/- ,ব্যয় = ১৪৪৭ঌঌ/-
মোট মুনাফা = ৫৬৫২০১/-
( - ) সুদ ১৫% (১৪৪৭ঌঌ টাকার) = ২১৭২০/-
নীট মুনাফা = ৫৪৩৮৮১/-
কলম দ্বারা বংশ বিস্তার পদ্ধতি:
=====================
* বীজ, শাখা কলম, গুটি বা দাবা কলম, জোড়কলম এবং চোখ কলমের মাধ্যমে সাধারণত: বংশ বিস্তার করা যায়৷ তবে সচরাচর চোখ কলমের মাধ্যমেই গোলাপের উন্নত জাতের বংশ বিস্তার করা হয়ে থাকে৷
* আদি জোড় হিসাবে (স্টক) প্রথকে জংলী গোলাপের শাখা কলম করা হয় এবং পরে এই শাখা কলমে চোখ কলম (টি কলম) করে উন্নত জাত তৈরী করা হয়৷ চোখ কলমের জন্য টি, হাইব্রিড টি ইত্যাদি উন্নত জাতের গাছের ফুল কুড়ির ডালা হইতে চোখ বা সায়ণ সংগ্রহ করা হয়৷
* শাখা কলম কার্তিক মাসের মাঝামাঝি সময় হতে শেষ কার্তিকের মধ্যে মাটিেত বসাতে হয়৷ কার্তিক মাসে বসানো কাটিং ৬ সপ্তাহের মধ্যে নতুন শিকড় ও বীটপ গজাবে৷ অবশেষে এই শাখা কলম টবে কিংবা পলিব্যাগে স্থানান্তর করে যত্ন নিতে হবে৷ শাখা কলমের বয়স ১-১.৫ বছর হলে মাঘ ফাল্গুনের মধ্যে চোখ, (টি চোখ) কলম করতে হবে৷ ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে নতুন কুঁড়ি গজাবে৷ অবশেষে এই টি কলম করা গাছ আষাঢ়-শ্রাবণ কিংবা আর্শ্বিন- কার্তিক মাসে গোলাপের জন্য নির্ধারিত বাগানে রোপণ করতে হবে৷
=================================================
তথ্য সূত্র:
দৈনন্দিন কৃষিবিজ্ঞান, কৃষিবিদ আব্দুল্লাহেল বাকী
বানিজ্যিক ভিত্তিতে ফুল উত্পাদন, আইটিডিজি- বাংলাদেশ
এটি http://www.jeeon.com.bd/index.php?option=com_content&task=category§ionid=27&id=171&Itemid=340 লিংক থেকে কাট-পেষ্ট।
=================================================
আরও কিছু তথ্য, জানলে ক্ষতি কি?...
নামঃ গোলাপ
ইংরেজী নামঃ Rose
বৈজ্ঞানিক নামঃ Rosa sp.
পরিবারঃ Rosaceae
বর্ণ, গন্ধ ও সৌন্দর্যের দিক থেকে গোলাপকে ফুলের রানী বলা হয়। পুষ্প প্রেমীদের সবচেয়ে প্রিয় ফুল গোলাপ। গোলাপ একটি শীতকালীন ফুল। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই গোলাপের চাষ হয়। সাধারনত আগষ্ট-সেপ্টেম্বরের মাস গোলাপের রোপণের জন্য উপযুক্ত সময়। কাটিং, গুটি কলম, দাবাকলম, জোড় কলম, চোখ কলম প্রভৃতি পদ্ধতিতে গোলাপের বংশ বৃদ্ধি করা হয়। কাট ফ্লাওয়ার হিসাবে গোলপের ব্যবহার খুবই জনপ্রিয়।
জাতঃ
গোলাপের জাত প্রধানত ৭টি। যথা- হাইব্রিড টি, হাইব্রিড পার্পেচুয়েল, পলিয়েন্থা, ফ্লোরিবান্ডা, মিনিয়েচাস এবং রেমব্লার।
শীতের কুয়াশার চাদরের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে শিশিরভেজা গোলাপ ফুল, পাপড়ির ওপর জমে আছে বিন্দু বিন্দু শিশিরের হীরককুচি—সূর্যের আলোয় চিক চিক করছে। তাতে যেন আরও রূপ খুলেছে গোলাপের। কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই ভেসে আসছে মিষ্টি সৌরভ। শুধু অন্যের বাগানের গোলাপ দেখে মন ভরানো নয়, চাইলে নিজেও ফোটাতে পারেন এমন সুন্দর গোলাপ।
রোম সম্রাট নিরো আর মিসরের সুন্দরী ক্লিওপেট্রারও প্রিয় ছিল গোলাপ। নিরো তাঁর প্রাসাদের এমন কোনো জায়গা ছিল না যেখানে গোলাপগাছকে ঠাঁই দেননি। ঘরের মেঝেতে গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে রাখতেন সারাক্ষণ, গোলাপের সুরভি নেওয়ার জন্য। অতিথি মার্ক অ্যান্টনির আগমনে মিসরের রানি ক্লিওপেট্রা তাঁকে তাঁর হাঁটু পর্যন্ত গোলাপ বিছিয়ে দিয়ে অভিবাদন জানিয়েছিলেন। সেসব আজ অলীক কল্পনার মতোই। তবে গোলাপের প্রতি ভালোবাসা তো কারও কম নয়। গাছে গাছে সজীব গোলাপ ফুটিয়ে সেখান থেকে দু-চারটা গোলাপ তুলে আমরা অন্তত ফুলদানিতে রেখে বা ফুলেভরা টবশুদ্ধ গাছটাই দুই-চার দিন ড্রইংরুমে রেখে আনন্দ পেতে পারি। তবে সেজন্য কোন গোলাপ লাগাবেন, কেমন করে লাগাবেন, তা তো জানা চাই। গোলাপ ফোটাতে চাইলে শুধু কায়দাগুলো একটু জেনে নেওয়া দরকার। আর দরকার ভালো গোলাপের কলম সংগ্রহ।
নানা জাতের গোলাপ
গোলাপের আছে অসংখ্য জাত। কোনোটা বুনো, ছোট ছোট প্রচুর ফুল ফোটে। কোনোটার ফুল অনেক বড়। এগুলো হাইব্রিড ‘টি’ শ্রেণীর। কোনোটার গাছ লতানো, কোনোটার ঝোপালো। শীতে ফোটার জন্য আশপাশের নার্সারিতে গোলাপি, গাঢ় গোলাপি, লাল, মেরুন, খয়েরি, ঘিয়া, হলুদ, সাদা, দুইরঙা, মিশ্রবর্ণা অনেক রকমের গোলাপ পাবেন। পছন্দটা আপনার। ওখান থেকে বাছাই করে কিছু কলম সংগ্রহ করে নিন। টবের জন্য ছোট গাছবিশিষ্ট মিনিয়েচার শ্রেণীর গোলাপই ভালো। এতে চাষ ও যত্ন করতে সুবিধা হয়, প্রদর্শনীতেও নেওয়া যায় সহজে। এসব শ্রেণীর গোলাপ কলম লাগানোর জন্য বড় টবের দরকার নেই, আট থেকে ১০ ইঞ্চি মুখের টব হলেই চলবে। কিন্তু হাইব্রিড টি এবং ফ্লোরিবানদা শ্রেণীর গোলাপের জন্য চাই বড় মুখের টব, যার মুখের ব্যাস ১২ ইঞ্চি বা তার বেশি। মাটির টবই ভালো।
গাছ লাগাবেন যেভাবে
গোলাপের জন্য সার-মাটি অন্য ফুলের মতো নয়, একটু আলাদা। মাটি তৈরির আগে সার জোগাড় করতে হবে। পচা গোবর বা প্যাকেটজাত জৈব সার, কাঠের ছাই, পাতা পচা সার বা পচা আবর্জনা সার অথবা ফেলে দেওয়া চায়ের পাতি টবের মাটিতে মেশানো যেতে পারে। খৈল দেওয়া যায়, তবে খৈল দিলে পিপড়ার উপদ্রব হতে পারে, ওরা শিকড় নষ্ট করে দেয়। তিনভাগ দো-আঁশ মাটির সঙ্গে একভাগ জৈব সার ও একভাগ কাঠের ছাই মিশিয়ে টবের জন্য সার-মাটি তৈরি করতে পারেন। টবে কোনো রাসায়নিক সার দেওয়ার দরকার নেই। জমির গর্তে লাগানোর অন্তত ১০ দিন আগে জৈব সারের সঙ্গে দুই-তিন চাচামচ করে টিএসপি ও এমপি সার মিশিয়ে দিতে পারেন।
টবের ঠিক মাঝখানে গোলাপের কলম লাগিয়ে হালকা সেচ দেবেন। লাগানোর পর টবসমেত গাছটিকে দিনকয়েক ছায়ায় রাখতে হবে। এ সময় কিছু পাতা ঝরিয়ে দিতে পারেন। এতে কলম দ্রুত বেঁচে উঠবে। নতুন পাতা ছেড়ে গাছ বাড়তে শুরু করলে রোদে বের করে দিতে পারেন। শীত শেষে যখন গাছে নতুন ডালপালা গজানো শুরু করবে, সে সময় অল্প করে ইউরিয়া সার (এক চিমটি সার প্রতি লিটার পানিতে গুলে) গাছের গোড়ায় দিতে পারেন। এতে গাছ দেখতে ভালো হবে, বাড়বে ভালো। তবে সার বেশি হলে ক্ষতি হবে। আজকাল বাজারে বিভিন্ন রকমের ট্যাবলেট সার পাওয়া যাচ্ছে। দুটি সার বড়ি কিনে গাছের গোড়ার মাটিতে দুই ইঞ্চি গভীরে পুঁতে দিতে পারেন। এটা দিলে এক বছরের মধ্যে আর কোনো সার দিতে হবে না। মাঝেমধ্যে অল্প করে চায়ের পচা পাতি টবের ওপরের মাটি হালকা করে নিড়িয়ে তার সঙ্গে মিশিয়ে দিতে পারেন। টবের মাটি যাতে একবারে শুকিয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। নিয়মিত সেচ দেবেন। বেয়াড়া ডালপালা অবশ্যই ছেঁটে দেবেন। জুন আর সেপ্টেম্বরে গোলাপগাছ ছাঁটতে পারেন। না হলে ভালো ফুল ফুটবে না। দুই-তিন বছর পর টবের মাটি পুরো বদলে দেবেন। পুরোনো মাটি রাখলে তাতে ফুল ভালো হবে না। তবে আমার পরামর্শ হলো—একঘেয়েমি কাটাতে শুধু মাটি বদল নয়, নতুন জাতের অন্য গোলাপের কলম এনে লাগাতে পারেন। ঠান্ডা কমে এলে ফেব্রুয়ারি থেকেই গোলাপ বাগানের কাজ শুরু করতে পারেন। তবে বর্ষাকালের আগে লাগানো ভালো। ওই সব গাছে আগামী শীতজুড়ে প্রচুর ফুল ফুটবে।
গোলাপের খোঁজ
কৃষিবিদ উপকরণ নার্সারি, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট চত্ব্বর, ফার্মগেট, ঢাকা। ফোন: ০১৮১৯১৯৪৩০৩।
ভোসড নার্সারি, গ্রিনফিঙ্গার নার্সারি, এগ্রিটেক, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট চত্বর, ফার্মগেট, ঢাকা।
ডালিয়া নার্সারি, কেডিএ আউটার বাইপাস রোড, সোনাডাঙ্গা, খুলনা। ফোন: ০১৭১৪০৫৭৭৮৩
রাঙাবন নার্সারি, সাভার বাসস্ট্যান্ড, সাভার, ঢাকা।
================================================================
------ সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো/শিশিরে সতেজ গোলাপ/মৃত্যুঞ্জয় রায় | তারিখ: ২৬-০১-২০১০।
================================================================
জনাব কাউছার খোকন সাহেব দৈনিক সমকাল লিখেছেন। আসুননা তাও পড়ি...
যেভাবে গোলাপের চাষ
বর্তমানে যেসব আধুনিক জাতের গোলাপ চাষ হয় সেগুলোর অধিকাংশ দুটি জাতের মিলনে হয়েছে। জাতগুলোর কোনোটির গাছ বড়, কোনোটি ঝোপালো, কোনোটি লতানো। জাত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী গোলাপ গোলাপি, হলুদ, কমলা, সাদা এবং মিশ্রিত হয়ে থাকে। রানী এলিজাবেথ [গোলাপি], ব্ল্যাক প্রিন্স [কালো], ঋষি বঙ্কিম [লাল], ইরানি [গোলাপি], সিনড্রেলা [সাদা], মিরিন্ডা [লাল], আলেকজান্ডার [কমলা], আইক্যাচার [দুই রঙবিশিষ্ট] কয়েক সুদৃশ্য জাত রয়েছে। গোলাপের বংশবিস্তারের জন্য অবস্থাভেদে শাখা কলম, দাবা কলম, গুটি কলম ও চোখ কলম পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। নতুন জাত উদ্ভাবনের জন্য বীজ উৎপাদন করে তা থেকে চারা উৎপাদন করা হয়।
জমি নির্বাচন : গোলাপ চাষের জন্য উর্বর দোআঁশ মাটির জমি নির্বাচন করা আবশ্যক। ছায়াবিহীন উঁচু জায়গা যেখানে জলাবদ্ধতা হয় না, এরূপ জমিতে গোলাপ ভালো জন্মে।
জমি তৈরি : নির্বাচিত জমি ৪-৫ বার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা ও সমতল করতে হবে। জমির আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। এরপর মাটি কুপিয়ে জমি থেকে ৫ সেন্টিমিটার উঁচু করে ৩ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য ও ১ সেন্টিমিটার প্রস্থ আকারের বেড বা কেয়ারি তৈরি করতে হবে। এভাবে জমি তৈরি করার পর নির্দিষ্ট দূরত্বে ৬০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য ও ৬০ সেন্টিমিটার প্রস্থ আকারের এবং ৪৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত খনন করতে হবে। বড় গাছ ৬০-৯০ সেন্টিমিটার ছোট গাছ ৩০-৪০ সেন্টিমিটার এবং লতানো গাছ ২-২.২৫ মিটার দূরত্বে লাগাতে হবে। গর্তের ওপরের মাটি ও নিচের মাটি আলাদা করে রাখতে হবে। চারা রোপণের ১৫ দিন আগে গর্ত করে খোলা রাখতে হবে। এ সময় রোদে গর্তের জীবাণু ও পোকামাকড় মারা যায়।
সার প্রয়োগ : নিচের মাটির সঙ্গে ৫ কেজি পচা গোবর, ৫ কেজি পাতা পচা সার, ৫০০ গ্রাম ছাই, হাড়ের গুঁড়া ২০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, এমপি ৫০ গ্রাম ভালোভাবে মিশিয়ে গর্তের ওপরের স্তরে দিতে হবে। এভাবে গর্ত সম্পূর্ণ ভরাট করার পর ১৫-২০ দিন ফেলে রাখলে সারগুলো পচবে ও গাছ লাগানোর উপযুক্ত হবে। বর্ষাকালে যাতে গাছের গোড়ায় বৃষ্টির পানি জমে না থাকে সেজন্য নালা তৈরি করতে হবে।
চারা বা কলম রোপণ : আশি্বন মাসে চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। তবে পৌষ মাস পর্যন্ত চারা লাগালে বেডের গর্তের মাঝখানে ক্ষুদ্রাকৃতির গর্ত খুঁড়ে চারা লাগাতে হয়। প্রথমে পলিথিন ব্যাগ বা মাটির টব থেকে চারা বের করে দুর্বল শাখা, রোগা শিকড় ইত্যাদি কেটে ফেলতে হয়। চারা লাগিয়ে গোড়ার শক্তভাবে মাটি চেপে দিতে হবে। চারা রোপণের পর চারাটি একটি খুঁটি পুঁতে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে দিতে হবে। চারা লাগিয়ে গোড়ায় পানি দিতে হবে। ২-৩ দিন ছায়ার ব্যবস্থা করলে ভালো হয়।
পরিচর্যা : আগাছা দেখামাত্র নিড়ানি দিয়ে সমূলে তুলে ফেলা উচিত। মাটির আর্দ্রতা যাচাই করে গাছের গোড়ায় এমনভাবে সেচ দিতে হবে, যেন মাটিতে রসের ঘাটতি না হয়। ফুল কুঁড়ি জন্মানোর সময় অল্প পরিমাণে ঘন ঘন পানি সেচ দিলে আকারে বড় হয়। গোলাপের কেয়ারিতে কোনো সময়ই পানি জমতে দেওয়া উচিত নয়। তাই বর্ষা আসার আগে নালা কেটে অতিরিক্ত পানি বের করার ব্যবস্থা করা উচিত। নিয়মিত ডালপালা, ফুলের কুঁড়ি ছাঁটাই করতে হবে। আক্রান্ত রোগ-বালাই প্রতিকারের জন্য কিউপ্রাভিট বা কপার অক্সিক্লোরাইড প্রয়োগ করে এ রোগ দমন করা যায়। আক্রান্ত পাতাগুলো কেটে পুড়িয়ে ফেলা উচিত। দু'সপ্তাহ পরপর মেলাথিয়ন বা ডাইমেক্রন ১০০ ছিটালে পোকা দমন হয়।
2 মন্তব্য(গুলি):
লতানো গোলাপের চারা বা ডাল কোথায় পেতে পারি??
দাম কি রকম হবে??
Titanium Tools - Titsanium Paint - Titsanium Art
Titsanium Paint is the perfect tool for titanium glasses frames making your own titanium cookware brushes for home decor. 토토 사이트 코드 Our Titsanium paint works well titanium mens rings in both trekz titanium headphones home and office.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন